অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক : সাড়ে ৬ বছরেও আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর মতিঝিলের বাংলার বাণী ভবনের চেম্বারের সামনের রাস্তায় সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালায়। ব্যারিস্টার তাপস অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।
বোমা হামলার ৬ দিনের মধ্যে ৬ আসামিসহ মোট ৮ আসামি গ্রেফতার ও তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সাড়ে ৬ বছরে মামলাটি তদন্ত করেন চারজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে গড়িয়ে গেছে সাড়ে ৬ বছর। নথির ওজন বেড়েছে। নথি আদেশের জন্য ১৪৭ বার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্ত আর শেষ হয় না।
তদন্তের দীর্ঘসূত্রতায় উচ্চ আদালত থেকে একে একে জামিন পেয়ে গেছেন সব আসামি।
আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৩১ মার্চ ডিবি ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে আশার কোনো কিছু নেই। মামলার তদন্ত চলছে, প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে ইত্যাদি গতানুগতিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. আলম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের সকল বিষয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মনিটরিংয়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে কিংবা কতোদিনের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আলম মিয়া বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে এমন বলা যাবে না। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যে পরিমাণ সময় লাগবে তার বেশি নেওয়া হবে না।
তদন্ত প্রতিবেদনের সম্ভাব্য কোনো সময় বলতে পারেননি তিনি।
মামলার বাদী ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে তদন্ত বিষয়ে কোনো কথা হয় কি-না কিংবা কোনো খোঁজ-খবর রাখেন কি-না জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা আলম মিয়া বলেন, তিনি মামলার বাদী। তার বক্তব্য তিনি এজাহারে বলেছেন। এখন বাকি কাজ পুলিশের। তবে তদন্তের স্বার্থে তার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে কথা বলবো।
২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর ব্যারিস্টার তাপসের ওপর বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ওই দিনই তিনি মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর এর তদন্ত শুরু করেন মতিঝিল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরজু মিয়া নিজেই। চাঞ্চল্যকর বিবেচনায় পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনার ২ দিন পর ২৩ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদকে। তাকে তিন দফায় ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ২০১০ সালের ২ মে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
২৬ অক্টোবর গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হাসান সোহেল ও মাহবুবুল হাসান ইমরান। তাদের দুই দফায় ৬ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তারাও।
মেজর (অব.) বজলুল হুদার ভাইপো আতাউল হুদা গ্রেফতার হন ওই বছরের ৪ নভেম্বর। তাকে ৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনিও পরবর্তীতে জামিন পান।
কামরুল হক স্বপন ও আব্দুর রহিম গ্রেফতার হন ওই বছরের ২২ অক্টোবর। স্বপনকে দুই দফায় ১২ দিন ও রহিমকে তিন দফায় ১৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০১০ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তারা।
২৪ অক্টোবর গ্রেফতার হন শফিউল্লাহ সফু। তাকে দুই দফায় ৬ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তিনিও জামিনে আছেন।
তাপসের ওপর বোমা হামলার আগে ও পরে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ ২০১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে সোহেল রানাকে। তাকে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনিও ২০১০ সালের ৩০ মার্চ হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর বাংলার বাণী ভবনের চেম্বারের সামনের রাস্তায় সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালায়। তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তাপস বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী ছিলেন।